কোরআন শেখাচ্ছেন অন্ধ এক হাফেজ! কীভাবে তা সম্ভব?

Estimated read time 1 min read

সংবাদদাতা॥

 

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন অন্ধ হাফেজ মুহাম্মদ রুমান। তার বাবা মগল কাজি ছিলেন কৃষক। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
তাঁর জন্মের দেড় বছর বয়সে তাঁর জ্বর হয়টাইফয়েড জ্বর।

ছয় মাস স্থায়ী জ¦রের মধ্যে বাম চোখের আলো চলে যায়। সাত বছর বয়সে ডান চোখেরও আলো হারিয়ে ফেলে রুমান। তখন থেকে পুরোপুরি অন্ধ। তার বাবা চাইতেন, রুমান কোরআনে হাফেজ হবে। বাড়িতে হুজুরও রেখেছিলেন একজন।

কিন্তু পড়া হচ্ছিল না। তখন ১৯৯৯ সাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি হন রুমান। দুই মাস পর ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন রুমান। তিনি আর স্কুলে যাননি। ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন স্যারকে। একদিন স্যার বাড়ি এলেন তাঁকে নিতে। স্বপ্ন দেখালেন। বাড়ির লোকেরা যেতে বলেন। তিনি যাননি। কোরআন শেখার জন্য বেকুল হয়ে থাকেন।

 

স্কুল ছেড়ে বাড়িতে সকালের মক্তবে কিছু দিন পড়েছেন রুমান। দেখেন, এভাবে পড়া হচ্ছে না। ভাইদের মাধ্যমে অন্ধদের মাদরাসা খুঁজতে থাকেন। একদিন ভৈরবের শরফুদ্দিনের হাত ধরে ঢাকার মুহাম্মদপুরে আল মারকাজুল ইসলামিয়ায় ভর্তি হন।

 

মাদরাসায় ব্রেইল পদ্ধতিতে কোরআন পড়ার নিয়ম শেখেন। তাঁর ক্লাসে ৩০ জন ছাত্র ছিল। এর মধ্যে ১৩ জনই অন্ধ। শিক্ষকদের কেউ অন্ধ ছিল না। দুই বছরে নাজের পড়েন। যেদিন নাজেরা শুরু করেন, বাবা সেদিন খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন। সেখানে তিন বছরে ২৪ পারা মুখস্থ করেন। শিক্ষকরা তাঁর প্রতি খুশি ছিলেন। এরপর রায়পুরার বালুয়াকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হন।

 

সেখানে হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলামের কাছে বাকি ছয় পারা মুখস্থ করেন। এখানে তিনি ব্রেইল পদ্ধতিতেই পড়তেন। মুখস্থ করে শুধু হুজুরকে শুনিয়ে আসতেন। হেফজ শেষ করে আলেম হওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করেন রুমান। চট্টগ্রাম যান। তখন ২০০৮ সাল। আল মারকাজুল ইসলামিয়ায় কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। শিক্ষকদের কথা শুনে লিখে তাদের দেখাতেন। এভাবে মিজান জামাত পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন। ২০১২ সালে পাবনার বন্ধু ফোন করে চাকরির অফার করে। চাকরির জায়গা বগুড়া। অন্ধ ও ভালো দুই ধরনের ছাত্রকে পড়াতে হবে। রুমান ভাইদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

 

তাঁকে সাহস দেন। দেড় হাজার টাকা বেতনে সেখানে চাকরি করতেন রুমান। ১৪ মাস ছিলেন সে মাদরাসায়। পরে মায়ের পীড়াপীড়িতে চলে আসেন। এরপর চাকরি নেন বালুয়াকান্দি মাদরাসায়। সেখানে তিন বছর পড়ান। প্রায় হাজার ছাত্রকে কোরআন পড়িয়েছেন তিনি। ২৫ জন তাঁর হাতে গড়া ছাত্র হাফেজ হয়েছে। এর মধ্যে আটজন অন্ধ।

বালুয়াকান্দি থাকাবস্থায় বিয়ে করেন। এখন তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে।

২০১৬ সালে রায়পুরার মাহমুদাবাদে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন রুমান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নীলকুঠির পাশেই মাদরাসা। বাবার রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে মাদরাসা করেন। নাম রাখেন মাহমুদাবাদ মগল কাজি ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। ভাইয়েরা মিলে টিনের লম্বা দুটি ঘর, বাথরুম ও গোসলখানা করে দেন। প্রতি মাসে ভাইয়েরা মিলে মাদরাসায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা দান করেন।

স্থানীয় লোকেরাও দান করেন। জনগণের সহযোগিতায় মাদরাসা টিকে আছে।
রুমানই মাদরাসার মোহতামিম ও প্রধান হাফেজ। শিক্ষক আছেন মোট চারজন। ছাত্র আছে ৬০ জনের মতো। এর মধ্যে ছয়জন অন্ধ। এরই মধ্যে একজন ছাত্র হাফেজ হয়েছে। এখানে পড়তে ছাত্রদের কোনো বেতন দিতে হয় না; বরং তাদের খাবার, নাশতা, জামা-কাপড় বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।

 

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours