অনলাইন ডেস্ক॥
ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানাধীন মহেরা ইউনিয়নের মহেরা গ্রামে অবস্থিত মহেরা জমিদার বাড়ি, শতাধিক বর্ষের সহস্রাধিক স্মৃতি বিজড়িত সুরম্য ভবনসমূহ সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে দর্শনার্থীর মনোরঞ্জনের অপেক্ষায় থাকে, যা জমিদার বাড়ির পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। টাঙ্গাইল জেলায় অনেকগুলো জমিদার বাড়ি আছে, মহেরা জমিদার বাড়ি তার মধ্যে অন্যতম। জমিদার বাড়ির অপূর্ব কারুকাজ ও নির্মাণশৈলী দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে দেয়। বিশাল এলাকাজুড়ে মহেরা জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।
মহেরা জমিদার বাড়িটি মূলত চারটি ভবনে বেষ্টিত। মহারাজ লজ,আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ ও কালীচরণ লজ। বাড়িটি মোট ৮ একর জমির উপর অবস্থিত। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে ‘বিশাখা সাগর’ নামে এক দীঘি। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। ভবনের পিছনে রয়েছে ‘পাসরা পুকুর’ ও ‘রানী পুকুর’।
ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার পুত্ররা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের নিকট থেকে এটি বিপুল অংশ পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে নেন। ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে জমিদার শাসন বাতিল হয় এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মূল জমিদারদের অধিকাংশই ভারত চলে যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাসাদ কমপ্লেক্স এ প্রবেশ করার জন্য কালীচরণ লজ আর চৌধুরী লজের সামনে রয়েছে দুটি সিংহ দরজা। মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পড়বে কালীচরণ লজের সামনে চোখ ধাঁধানো নকশার একতলা ভবন যা বর্তমানে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মিউজিয়ামে প্রতীকী হিসেবে মোগল আমলের পুলিশ কর্মকর্তা থেকে বর্তমান সময়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাস্কর্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। জমিদার আমলে ব্যবহৃত তৈজসপত্র সুন্দর করে সাজানো আছে এখনো।
চৌধুরী লজের পেছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গায় রয়েছে একতলা আরেকটি ভবন, যা বর্তমানে অতিথি ভবন নামে পরিচিত। ভবনটির সামনের দিকে অনুচ্চ স্তম্ভের উপরে নির্মিত ত্রিফয়েল আর্চ যুক্ত প্রবেশদ্বার আছে। অলংকরণের দিক থেকে আনন্দ লজটিকে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। প্রাসাদের সম্মুখভাগে দোতলা পর্যন্ত লম্বা ছয়টি কোরাস্থির স্তম্ব, সামনের দিকে দু‘পাশে কারুকাজ করা দুটি ভ্যানিসিয় ঝুল বারান্দা, ছাদের রেলিং এবং কার্নিশে ফুলের মালা আর জ্যামিতিক অলংকরণ প্রাসাদটিকে অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। দু‘পাশের বারান্দার উপরে প্যাঁচানো ধাঁচের লগো দেখে মনে হয় এটি মহেরা জমিদারীর সিল। জমিদার বাড়ির সর্ব পশ্চিমের ভবনের নাম মহারাজ লজ। এই লজ হচ্ছে সর্ববৃহৎ স্থাপনা, যা ছিলো জমিদার গজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরীর আবাসন। ১২টি কক্ষ নিয়ে ভবনটি স্থাপিত।
তবে পাসরা পুকুরের সামনে রয়েছে ছোট ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা। সেখানে দেখা যায়, ট্রেন, নাগরদোলা, স্লিপার, দোলনা প্রভৃতি। বিনোদনের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। পাসরা পুকুরের উত্তর পশ্চিম পাশে রয়েছে অনেক বড় একটি মাছের একুরিয়াম। বিশাখা সাগর নামে যে বড় দীঘি রয়েছে তার পাশে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি বড় মসজিদ। মসজিদসহ প্রতিটি লজই খুব সুন্দর, রং করা। মনে হয় শত বছর নয় শতদিন পূর্বেই তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি ভবন। সে সময়ই রং করে রাখা হয়েছে। এই দীঘির পানিতে নৌকা রয়েছে বিনোদনের জন্য। তবে দীঘির পূর্ব ও উত্তর পাশে বাঁধানো ঘাট রয়েছে। জমিদার বাড়ির ভিতরে সবুজ গাছপালায় ভরপুর। মহেরা জমিদার বাড়ি সভ্যতা আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন। অনিন্দ্য সুন্দর কারুকার্য আর বিশাল মহলগুলো আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক মহেরা জমিদার বাড়ি

+ There are no comments
Add yours