তুরস্কে মাটির নিচে ২৮০ ফুট গভীরে ১৮ তলা শহর!

Estimated read time 1 min read
Spread the love

রুদ্রনীল॥

হাজার বছরের পুরনো এবং মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এক রহস্যময় শহর আবিষ্কৃত হয়। তুরস্কের আনাতোলিয়ার কাপাডোশিয়ায় অবস্থিত এই ভূগর্ভস্থ শহর। নাম তার ডেরিংকুয়ো। মাটির নিচে প্রায় ২৮০ ফুট গভীর এই শহরটির ছিল ১৮টি স্তর। এই স্তরগুলো জুড়ে ছিল স্কুল, গীর্জা, রান্নাঘর, গোয়াল, কবর সহ একটি সম্পূর্ণ শহর। প্রায় ২০,হাজার মানুষের বাসযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছিল এটি।

১৯৬৩ সালে সাধারণ একটি বাড়ি মেরামতের সময় আবিষ্কৃত হয় মাটির নিচে লুকিয়ে রহস্যময় শহরটি। ধারণা করা হয় কয়েক মিলিয়ন বছর আগেই এই এলাকাটিতে অগ্নুৎপাত হয়েছিল। ৩ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু মালভূমিতে অবস্থিত এই অঞ্চল। সমস্ত এলাকা ডুবে গিয়েছিল ছাই আর লাভায়। পরবর্তীতে এই ছাই ও লাভা পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় নরম শিলায়। প্রাচীন আদিবাসীরা বুঝতে পেরেছিল, এই শিলা খোদাই করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব। তারপর তারা সেই নরম শিলা খোদাই করে তৈরি করা শুরু করে ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থল মাটির নিচে। এই অঞ্চলের মাটির নিচে এমন বহু স্থাপনা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বিশাল ও গভীর হলো ডেরিংকুয়ো। ধারণা করা হয় কোনো এক জাতি শত্রুপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যই তৈরি করেছিল মাটির নিচে এই শহর।

তবে মাটির নিচে এই শহরটি কারা ঠিক কোন সময়ে বানিয়েছিলেন তা সঠিক জানা যায় নি। কেউ কেউ ধারণা করেন, ফ্রিজিয়ানদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্যই হিত্তিতিরা ডেরিংকুয়ো নির্মাণ করেছিল। এখানকার ঘরগুলো মাটির নিচে। ঘরে প্রবেশের মুখগুলো কুয়ার মতো হলেও ভেতরে ছিল যথেষ্ট প্রশস্ত। গবাদিপশুর যাতায়াতের জন্য ছিল সুড়ঙ্গ। তবে মানুষ যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতো সিঁড়ি। ঘরগুলোতে ছাগল, ভেড়া, বাছুরসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি পোষা হতো এবং প্রতিটি ঘরেই এদের সবার খাবারের ব্যবস্থা ছিল।

এসব গুহা ছাড়াও এখানে ছিল কয়েকটি উপাসনালয়, খাবারের দোকান, মদের ভান্ডার এবং কবরস্থান। বিভিন্ন ঝোপঝাড়, দেয়াল ও বাড়ির উঠানের আড়ালে লুকানো ছিল প্রায় একশর মতো প্রবেশপথ। মাটির নিচের এই শহরে প্রবেশের প্রতিটি দ্বার বন্ধ করা থাকতো প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া ও ৫০০ কেজি ওজনের গোলাকার পাথরের দরজা দিয়ে। গোলাকার পাথরের এই দরজাগুলো শহরকে রক্ষা করতো নানা রকম বিপদের হাত থেকে। প্রতিটি স্তরে এগুলো এমনভাবে বসানো হয়েছিল যাতে প্রতিটি স্তর আলাদা আলাদাভাবে বন্ধ করে দেয়া যায়। পুরো শহরজুড়ে বায়ুচলাচলের জন্য ছিল প্রায় কয়েক হাজার খাঁদ। এগুলোর একেকটি ছিল ১০০ ফুট গভীর। শহরের তলদেশ দিয়ে একটি নদীর প্রবাহ ছিল। গোটা শহরজুড়ে তৈরি করা হয়েছিল অনেকগুলো কুয়া। এই কুয়াগুলো সেই নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

কুয়া থেকেই সংগ্রহ করা হতো নিত্যদিনের খাবার পানি। শত্রুর আক্রমণে শহরবাসী যখন মাটির নিচে নিজেদের লুকিয়ে রাখত, তখনও এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অন্যান্য কাজকর্ম থেমে ছিল না। গণজামায়েতের জন্য এখানে ছিল স্থান, মুদির দোকান বিশাল খাবারের জায়গা, এমনকি সম্পূর্ণ বাজারও ছিল মাটির নিচে এই শহরে।

 

 

About The Author


Spread the love

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours