মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
তিতাসের বুকে আজ রচিত হলো অনন্য এক ইতিহাস। কবিরা এবার জলের বুকে ভাসালো সাহিত্যের সাম্পান। গল্প, কবিতা, গান আর আড্ডায় মুখরিত হলো হিমেল হাওয়া। মুড়ি, চানাচুর, বুট, বাদাম, শীমের বিচি আর কাঁঠালের স্বাদ আড্ডায় যোগ করল ভিন্নমাত্রা। দুষ্টুমি, খুনসুটিতে জানা হলো একে অপরকে। বড়দের জ্ঞানগর্ভ কথায় আজ হারিয়ে গিয়েছিলাম সাহিত্য আর ইতিহাসের অলি-গলিতে। নবীন-প্রবীণ, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ এর পার্থক্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল অদ্বৈত, আলাউদ্দিনের স্মৃতিধন্য তিতাসের বহুরৈখিক মিটিমিটি জলের ধারায়। প্রকৃতি আজ মেলে দিয়েছিল তার মায়াবী আদর। ছিল না রোদের তেজ, বাতাসের ক্ষিপ্ততা বা মেঘের বর্ষণ। যেন আমাদের সাদরে বরণ করে নিতেই তার সামগ্রিক আয়োজন। অস্তায়মান সূর্য সাক্ষী হলো সে অভূতপূর্ব স্মরণীয় মুহূর্তের। যাবার আগে আবির রঙ্গে রাঙিয়ে দিলো অর্ধশত প্রকৃতিপ্রেমীর হৃদয়। ফিরতি পথে গানের ডালি সাজিয়ে ধরল কেউ কেউ। যন্ত্রের আত্মচিৎকার উপেক্ষা করে, আঁধারের কালিমা ভেদ করে, জীবনের সুখ-দুঃখ, পাওয়া, না পাওয়ার হিসেব হিসেব-নিকেশ ভুলে, শিশুর মত সরলতায় হারিয়ে গেল সবাই। কারো সুরেলা গলায়, কারোবা বেসুরা গলায় গাওয়া গানের কলিগুলো দূরে হারিয়ে গেল বাতাসের সাথে। কিন্তু হৃদয়ে রেখে গেল একটুকরো প্রশান্তির পরশ। মধ্য শ্রাবণের বিকেল-সন্ধ্যা চিরো স্মরণীয় হয়ে রইল প্রতিটি প্রাণে। তরুণ মাঝির চোখেও আজ অবাক বিস্ময়। এরা ঘোরাঘুরির জন্য পয়সা খরচ করে নৌকা ভারা করে। আবার মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ করে মিনিট শতেক আড্ডা দেয়। কেমন লোক এরা !! আনন্দবাজার থেকে রসুলপুর। ৭টি ব্রিজ ১৪ বার উপুর হয়ে দেখছিলো সেই সাহিত্য আড্ডার দলটিকে। তারা যেন তিতাস, কুরুলিয়াকে ফিসফিসিয়ে বলতে চাইছিল ওরা কার ! এ পথে চলা হাজার হাজার নৌকার মাঝে ওরা আলাদা কেন ? কিসে ওদের পার্থক্য করে অন্য সবার চেয়ে…….।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস এর পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও নির্দেশনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের অংশগ্রহণে গত ২৬ জুলাই ২০২২, রোজ মঙ্গলবার এই ঐতিহাসিক নৌকা ভ্রমণ ও সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। এর পুর্বে এতোজন সাহিত্য-সংস্কৃতি-সামাজিক সংগঠনের মিলনমেলা তিতাসের বুকে আর কখনো হয়নি বলেই জানা যায়। বিকলে সারে চারটায় আনন্দবাজার নৌকাঘাট থেকে ভ্রমণ শুরু হয়ে তিতাস, কুরুলিয়া পেরিয়ে রুসুলপুর এর সন্নিকটে নোঙর করে নৌকাটি। সেখানে মধ্য নদীতে প্রায় দের ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য আড্ডা। গল্প, কবিতা পাঠ, স্মৃতিচারণ, সাহিত্য, ইতিহাসসহ নানান বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, বিশিষ্ট কবি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জয়দুল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আড্ডায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের রুপকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস। প্রর্বতক আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্জয় হাসান সোহেল এর উপস্থাপনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উলচাপাড়া মালেকা সাহেব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কবি সেলিম হোসাইন হাওলাদার, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার দেওয়ান দিদারুল আলম মারুফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোঃ আব্দুল মতিন সেলিম, আশুগঞ্জ ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কবি এম এ হানিফ, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক, কবি ও গীতিকার মোঃ আব্দুর রহিম, কবি ও গল্পকার সাদমান শাহিদ, মাসিক তিতাস বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক এমএ মতিন শানু, উদীচী জেলা শাখার সহ-সভাপতি ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া, সাহিত্য একাডেমির সহ-সভাপতি কবি ও কথাসাহিত্যিক এড. মানিক রতন শর্মা, নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙরের জেলা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ, পৌরসভার বাজার পরিদর্শক কবি অ্যাড মোঃ হুমায়ুন কবির, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন দত্ত, আইকর উপদেষ্টা মোঃ কামাল উদ্দিন, সাহিত্য একাডেমির পরিচালক জামিনুর রহমান, দৈনিক ফন্টিয়ারের বার্তা সম্পাদক কবি রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, প্লাটফর্ম সম্পাদক প্রকাশক-সম্পাদক কবি হেলাল উদ্দিন হৃদয়, আইপি চ্যানেল পথিক টিভির চেয়ারম্যান, প্রভাষক রাবেয়া জাহান তিন্নী, পথিক টিভির ব্যবস্থাপনার পরিচালক কবি লিটন হোসেন জিহাদ, অংকুর শিশু-কিশোর সংগঠনের সভাপতি আনিসুল হক রিপন, নোঙরের সাধারণ সম্পাদক খালেদা মুন্নী, কবির কলম প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি হুমায়ুন কবির, জেলা নাগরিক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মতিন শিপন, সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ এর সাধারণ সম্পাদক কবি ও লেখক উবায়দুল হক মুন্সী, সাহিত্য একাডেমির সদস্য কবি রিপন দেব নাথ, কবি শাহ্ মাহমুদা আক্তার সখী, নোঙরের সদস্য শিপন কর্মকার, মুক্তধারা সাহিত্য অঙ্গন এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক কবি কহিনূর আক্তার, দিনার আহমেদ প্রমুখ। চমৎকার এই ভ্রমণটি আয়োজন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সম্মানিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার মো. আ. কুদদূস মহোদয়ের প্রতি সবাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ও অংশগ্রহণকারীদের জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা। লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, সভাপতি-কবির কলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আমার লেখাটি প্রকাশ করায় এ এম টিভি বাংলাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
When I originally commented I seem to have clicked on the -Notify me when new comments are added- checkbox and now each time a comment is added I recieve 4 emails with the same comment. Is there a way you are able to remove me from that service? Kudos!