রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস
***
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলার সিমনা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৯.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘শেখ হাসিনা সড়ক’। প্রায় ৩৫ কিলোমিটারের দূরত্ব কমিয়ে এই সড়ক বিজয়নগর উপজেলার মানুষের যাতায়াত দুর্ভোগ দূর করেছে। যানবাহন চলাচলের জন্যে এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে সড়কটি। এ সড়ক শুধু যে শহরের সঙ্গে দূরত্বই কমালো তা শুধু নয় বরং ব্যাপক ভূমিকা রাখছে জেলার শিক্ষা, কৃষি, চাকরি, ব্যবসা ও অর্থনীতিতে।
এদিকে নদী আর বিলের বুকে নির্মিত এই সড়ক ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। খাল-বিল, নদী-হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি ইতিমধ্যেই জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, এটিকে সরকার ইচ্ছে করলেই একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
জানা যায়, এ সড়ক নির্মাণের আগে বিজয়নগরের বাসিন্দাদের সরাইল বা আখাউড়া উপজেলা ঘুরে আসা-যাওয়া করতে হত। সময়ও লাগতো দেড় থেকে দুইঘণ্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের জনগণকে।
বিশেষ করে বর্ষাকালে হাওর পাড়ি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায জেলা শহরে আসতে বিজয়য়নগরের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিমরাইলকান্দি থেকে বিজয়নগরের পত্তন ইউনিয়নের সিমনা পর্যন্ত প্রায় ৯ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হলেও এখন কাজ প্রায় শেষ। সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, শহর সংলগ্ন তিতাস নদীতে ৩১৫ মিটার এবং লইস্কা খালে ৩০৮ মিটারের দুটি সেতু এবং এর সঙ্গে প্রায় ১২০০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সড়ক রক্ষায় পাশে দেওয়া হয়েছে ব্লক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, এই এলাকার মানুষের জন্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়র তিতাস জনপদের অভিভাবক, সদর আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর অকৃত্রিম প্রচেষ্টায় নির্মিত এই সড়ক সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। ব্যবসায়িক চিন্তা না করে কাজটির স্থায়িত্ব এবং গুণগত মান কিভাবে ভালো হয় সেদিকেই লক্ষ্য রয়েছে জানা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সড়ক চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিজয়নগর উপজেলার মানুষ। পত্তন ইউনিয়নের লক্ষ্মীমোড়া গ্রামের কৃষক জিল্লু ভুঁইয়া বলেন, আগে উৎপাদিত শাকসবজি শহরের হাটে নিতে বেশ কষ্ট হত। হাওর এলাকা হওয়ায় নৌকায় করে শহরে যেতে দেরি হয়ে যেত। ফলে সবজির ভালো দাম পেতাম না। না। এখন মাত্র আধা ঘণ্টাতেই পৌঁছে যায় শহরে।
মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, আগে গ্রামের আশপাশে কলেজ না থাকায় মেয়েদের শিক্ষা স্কুল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ ছেলেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও দূরের পথ হওয়ায় নিরাপত্তার কারণে শহরে পড়তে দেওয়া হতো না মেয়েদের। এখন সড়ক চালু হলে মেয়েরাও শহরে গিয়ে পড়তে পারবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের আম, লিচু, মাল্টা ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদিত হয়। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় কৃষকরা যথাসময়ে এসব ফল জেলা শহরে নিয়ে যেতে পারতেন না। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতেন তারা। এখন শেখ হাসিনা সড়ক ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদিত ফল শহরে নিয়ে যেতে পারবেন কৃষকরা।
কবি ও কথাসাহিত্যিক শৌমিক ছাত্তারের মতে, আগে বিজয়নগরে কোনো কাজের জন্য গেলে, সকালে রওয়ানা দিলেও ফিরতে রাত হয়ে যেতো। আর এখন তো আধা ঘন্টায় যাতায়াত করা যায়।
সিএনজি অটোরিকশা চালক এরশাদ মিয়া বলেন, নতুন এই রোডটি চালু হওয়ায় আমাদের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। এজন্য তিনি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
পাঠাও চালক ইব্রাহিম বলেন, আগে ঢাকায় মোটরবাইক চালাতাম। বাড়ি আসতে পারতাম না। এখন নিজ এলাকায় চালায়। ইচ্ছেমতো বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করি।
+ There are no comments
Add yours