ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখি কেনো এতো বিখ্যাত?

Estimated read time 1 min read
Spread the love

রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস
***
যদি প্রশ্ন করা হয়, মিষ্টি জাতীয় খাবারের দিক বিবেচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনটির জন্য বিখ্যাত? তাহলে যে কেউ এর জবাবে বলবেন ছানামুখির কথা। প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে লোভনীয় খাবারের তালিকায় এই ছানামুখি নামটি যোগ করেছিলেন মহাদেব পাঁড়ে নামে এক ব্যক্তি। তারপর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে মানুষের পছন্দের তালিকায় জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে এই খাবারটি। সেই বৃটিশ কর্মকর্তা থেকে ধরে সাধারণ মাসনুষসহ সবাই এই ছানামুখির স্বাদে পরিতৃপ্ত। সংস্কৃতির রাজধানী এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখনো পছন্দের খাবারের তালিকার শীর্ষে আসে এই ছানামুখীর নাম।
শহরের মাতৃভাণ্ডার, ভোলাগিরি, জগদ্ধাত্রী, মহাদেব, আদর্শ মাতৃভান্ডার, ভগবতীসহ আরও অনেক মিষ্টির দোকানেই সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি এই মিষ্টির বেচাকেনা চলে। মুলত এর স্বাদই এর আভিজাত্যকে দীর্ঘকাল থেকে ধরে রেখেছে অন্যসব মিষ্টির শীর্ষে।

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, বৃটিশ অমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহাদেব পাঁড়ের তৈরি ছানামুখীর খ্যাতি উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মহাদেব পাঁড়ের জন্ম কাশী ধামে হলেও বড় ভাই দূর্গা প্রসাদদের দোকানে মিষ্টি তৈরি করতে কলকাতায় আসতেন কিশোর মহাদেব। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর এক সময় তিনি চলে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শহরের মেড্ডায় শিবরাম মোদকের মিষ্টির দোকানে কাজ নেন তিনি। কিছুদিন পরই তার বানানো ছানামুখির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

জনশ্রুতি আছে, এই মহাদের পাঁড়ের বানানো একটি বিশেষ ধরনের মিষ্টি খেয়েই প্রশংসা করেছিলেন ভারতের তৎকালীন বড় লাট লর্ড ক্যানিং এবং তার স্ত্রী লেডি ক্যানিং। তারপর থেকেই একটি মিষ্টির নাম রাখা হয় লেডিক্যানি।

ছানামুখি তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৬ কেজি ছানামুখি তৈরি করার জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ কেজি দুধ। আর তার সাথে দিতে হয় ৬ কেজি চিনি। প্রথমে ছানা তৈরি করে চারকোনা করে কেটে নেওয়া হয়। তারপর তা চিনির রসে ভেজে নিলেই তৈরি হয় সুস্বাদু ছানামুখী।

তাদের মতে, গরম কালে ছানামুখীর চাহিদা বেশি থাকে। তবে শীতকালেও ভালো বিক্রি হয়। বিভিন্ন দেশে থাকা স্বজনদের জন্য পাঠানো হয় এ মিষ্টি। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে এসে এ মিষ্টি এ না খেয়ে যাবেন এমন মানুষের দেখা পাওয়া কষ্টকর।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অতি সম্প্রতি চিনি কম দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই ছানামুখি। যাতে করে ডায়াবেটিক রোগিরাও অনায়াসে এর স্বাদ নিতে পারে। সাবধানতার জন্য চারকোনা এই ছানামুখির উপরে রেগে থাকা চিনিটুকু ফেলে দিয়ে খেলেই আর ঝুঁকি থাকেনা।

শহরের মিষ্টির দোকানগুলোয়, প্রতিদিন শতশত মানুষের ভিড় লেগেই থাকে এই মিষ্টি কেনার জন্য। তবে দেশের চেয়ে দেশের বাইরের বাঙালিদের কাছে এই মিষ্টির চাহিদা অনেক বেশি বলে জানা যায়। কারণ দেশের বাইরে থাকা অনেকেই সাথে করে এই মিষ্টি নিয়ে সেদেশে নিজ দেশের গর্বের কথা বলেন। সবকিছুর পর এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তথা বাংলাদেশকে বাইরের দেশে উপস্থাপন করতে এই ছানামুখির কোনো বিকল্প নেই।

 

About The Author


Spread the love

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours