স্টাফ রিপোর্টার॥
স্কুলছাত্রী সিপাকে তিন বছর ধরে বাসায় গিয়ে পড়ানোর ফাঁকেই প্রাইভেট শিক্ষক বাইজিদের সাথে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি বিয়ে নিয়ে দু’জনের মাঝে মনোমালিন্যের জের ধরে গভীররাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সিপা। এই বেরিয়ে যাবার ১২ ঘন্টা পর পুকুরে ভাসমান অবস্থায় মিললো তার মরদেহ। লাশ দেখতে এলে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করা হয় ওই ছাত্রীর প্রাইভেট শিক্ষক প্রেমিক বাইজিদ। এ ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসী বিষয়টির বিচার দাবী করেন।
রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা শহরের মুন্সেফপাড়াস্থ অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বোডিং মাঠ পুকুরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধারকৃত আশিকা জাহান সিপা (১৭) হল্লার ভাড়াটে শাহীন মিয়ার মেয়ে। সে সরকারি মডেল গার্লস হাই স্কুলের এবছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে। অপরদিকে ২৬ বছর বয়সী বাইজিদ সরকার জেলার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের মুখলেছুর রহমানের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থেকে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।
নিহতের পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলেজছাত্র বাইজিদ সরকার শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থেকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে টিউশনি করান। তারই ধারাবাহিকতায় মুন্সেফপাড়া মহল্লায় ভাড়া বাসায় থাকা বিরামপুরের শাহীন মিয়ার মেয়ে সিপাকেও তার বাসায় গিয়ে গত তিন বছর ধরে পড়াচ্ছিলেন বাইজিদ। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি সিপা বিয়ের জন্যে বাইজিদকে চাপ দেয়। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাদানুবাদও হয়। সর্বশেষ শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকেও সিপা মোবাইল ফোনে বাইজিদকে বিয়ের কথা বলেন। ‘এই মুহূর্তে তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়’ বাইজিদ এমনটি জানানোর পর সিপা কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়। স্বজনরা অনেক খুঁজাখুঁজি করেও তার হদিস পায়নি। দীর্ঘ ১২ ঘন্টা পর পরে রোববার দুপুর দেড়টার দিকে একই মহল্লাস্থ অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বোডিং মাঠ পুকুরে সিপার মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাসমান লাশ সিপার বলে শনাক্ত করেন। এসময় প্রাইভেট শিক্ষক প্রেমিক বাইজিদ সেখানে গেলে উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দিতে থাকে। এরই মাঝে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে আটক করাসহ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশে আটককৃত বাইজিদ সরকার জানায়, ‘সিপার সঙ্গে আমার প্রায় তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক। কয়েকদিন আগে তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের দু’জনকে রাস্তায় একসঙ্গে দেখে ফেলেন। এরপর থেকে সিপা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলো। গতকাল (শনিবার) রাত আড়াইটার দিকে সিপা আমাকে মোবাইল ফোনে কল করে বিয়ের কথা বলে। আমি তখন তাকে বলেছি এই মুহূর্তে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। তখন সে বলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। এরপর তার সঙ্গে আমার আর কোন যোগাযোগ হয়নি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশ উদ্ধারের পর তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েটির প্রেমিককে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
+ There are no comments
Add yours