রুদ্রনীল ॥
মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের ধারণাটি বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ও বেসরকারি কর্পোরেশনগুলির কাছ থেকে যেমন ব্যাপক সাড়া পেয়েছে তেমনি এটি বিজ্ঞান কথাসাহিত্য রচনা, চলচ্চিত্র ও শিল্পের ক্ষেত্রেও ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। চাঁদের পরই মঙলের প্রতি সবার আকর্ষণ এখন অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই সংস্থাগুলি বসতি স্থাপনের চেষ্টার প্রথম ধাপ হিসাবে মঙ্গল গ্রহে মানব অভিযানের পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে কোনও মানুষ এখনো পর্যন্ত গ্রহটিতে পদার্পণ করেনি। মঙ্গলে বসতি স্থাপনের মূল কারণগুলোর মধ্যে আছে কৌতূহল, মানুষবিহীন রোভারের আরও গভীর পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করার প্রয়াস। এর উৎসসমূহে অর্থনৈতিক আগ্রহ এবং অন্যান্য গ্রহে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে মানবজাতিকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার সম্ভাবনা সৃষ্টি। কারণ বর্তমানের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছে এই পৃথিবী একদিন বিলুপ্ত হবে। কাজেই মানুষের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। আর তাৃিথিবীর পরে বিজ্ঞানীদের চোখ এখন মঙলের দিকে। তবে মঙলে যাওয়া মানুষের পক্ষে এতোটা সহজ নয়। সেখানে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকির মধ্যে আছে মঙ্গলে ভ্রমণের সময় এর ভূপৃষ্ঠের বিকিরণের সংস্পর্শে আসা। সেখানকার বিষাক্ত মাটি, নিম্ন মধ্যাকর্ষন, সুপেয় জলের অভাব, শীতল তাপমাত্রা এবং পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহের দূরত্ব ও যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতা যা একাকিত্বের সৃষ্টি করবে। মঙলে স্থায়ী বসতি স্থাপন নিয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী সরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নাসা, ইএসএ, রসকসমস, ইসরো ও সিএনএসএ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি হল-স্পেসএক্স, লকহীড মার্টিন ও বোয়িং। তবে আশার কথা হলো- বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ মঙ্গল গ্রহে কতিপয় মানব অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে। জাতীয় মহাকাশ সংস্থা কর্তৃক সরকারিভাবে পরিকল্পিত সকল মানব অভিযানমূলক কর্মসূচী সরাসরিভাবে মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত মিশনের ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। নাসা, রসকসমস, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা দ্বারা পরিকল্পিত এ ধরনের অভিযানগুলো কেবলমাত্র পরীক্ষামূলক অনুসন্ধানের জন্যই পরিচালিত হয়েছে, একটি স্থায়ী ভিত্তি স্থাপন করা এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত সেটির বিষয়ে চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে নি। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- পৃথিবীর সাথে মঙলের বেশকিছু সাদৃশ্য রয়েছে। মঙলের আকৃতি, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দিক দিয়ে শুক্র গ্রহের সাথে পৃথিবীর সাদৃশ্য আছে, কিন্তু বসতি স্থাপনের কথা বিবেচনায় পৃথিবীর সাথে মঙ্গল গ্রহের আরো জোরালো মিল পাওয়া যায়। মঙ্গল গ্রহে দিনের স্থায়িত্বকাল পৃথিবীর এক দিনের স্থায়িত্ব¡কালের খুবই কাছাকাছি। মঙ্গল গ্রহে এক সৌর দিবসের স্থিতিকাল ২৪ ঘণ্টা, ৩৯ মিনিট, ৩৫.২৪৪ সেকেন্ড। মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ এলাকা পৃথিবীর আয়তনের ২৮.৪%, যা পৃথিবীর সমতল ভূমির তুলনায় সামান্য কম। মঙ্গলের পৃথিবীর মতো ঋতু আছে, যদিও তারা প্রায় দ্বিগুণ দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় কেননা এক মঙ্গল বছর পৃথিবীর প্রায় ১.৮৮ বছরের সমান।
মঙল গ্রহে কী মানুষের বসবাস করা সম্ভব?

+ There are no comments
Add yours