মেধা বিকাশ ও লালনে কাজ করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেধাদীপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম

Estimated read time 1 min read
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম একজন মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মেধাদীপ্ত মানুষ। এই কথাটি তাঁর জন্য শতভাগ প্রযোজ্য।
যেমন কিছু মানুষ আসে পৃথিবীর বুকে অনিন্দ্য সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ার নান্দনিক স্বপ্ন নিয়ে। তাঁরা সমাজব্যবস্থার উন্নয়নে মানুষের তরে নিজেকে উজাড় করে দেন। তাঁরা নিঃস্বার্থভাবে মুক্তি ও মানবতার বার্তা নিয়ে ফেরি করে পথে-প্রান্তরে। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে বলিষ্ঠ। তাঁদেরই একজন আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।

এর কিছু বাস্তব উদাহরণ আমরা গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি। ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাটি তাদের অনলাইন সংস্করণে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ছিলো-ঢাবি ছাত্র সৌরভের পড়াশোর খরচ দেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন।
খবরে বলা হয়, সৌরভের পড়াশোনার খরচ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সৌরভকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন সৌরভকে ভালো ফলাফল অব্যাহত রাখার শর্ত দিয়েছেন।

সৌরভ দাসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কানিউচ্ছ গ্রামে। বর্তমানে তিনি পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে। থাকেন জগন্নাথ হলে। সৌরভের বাবা বিষ্ণু দাস ও মা চম্পা রানী দাস। আরও তিন সন্তানকে নিয়ে মা গ্রামেই থাকেন। আর বাবা বিষ্ণু দাস থাকেন চট্টগ্রামে। সেখানে ফেরি করে স্টিলের হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন তিনি।

জন্মের পর থেকেই সৌরভ অভাব দেখেছেন। দরিদ্র বাবার অনটনের সংসারে তাই বেশি দিন থাকা হয়নি সৌরভের। দুরন্তপনার শৈশব কেটেছে নানাবাড়ি নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামে। সেখানে থেকেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর পরিবার ও আশপাশের মানুষের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসেন সৌরভ। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সৌরভকে ডেকে নিয়ে যান জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম। এ সময় তিনি সৌরভের পড়াশোনা ও পরিবারের বিষয়ে খোঁজ নেন। তিনি সৌরভকে পড়াশোনার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক, সহকারী শিক্ষক স্বপন মিয়া প্রমুখ।
সৌরভ দাস বলেন, জেলা প্রশাসনের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।’

এসময় জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সৌরভের পড়াশোনার সব দায়দায়িত্ব নিয়েছি। স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা পর্যন্ত সৌরভকে পড়াশোনার খরচ হিসেবে প্রতি ছয় মাস পরপর ২৫ হাজার টাকা দেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসন। আশা করি, এতে তাঁর খাতা-বই কেনাসহ পড়ার খরচ হয়ে যাবে।’

এর পরের সংবাদটি ছিলো এইরকম-আর সেটি প্রকাশিত হয় বাংলার উন্নয়ন নামের অনলাইন সংস্করণে, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে।
সংবাদের শিরোনাম ছিলো-মেধাবী শিক্ষার্থী আনিকার পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক।
সংবাদে বলা হয়- পিতাহারা সংসারে দারিদ্র্যতাকে কাছ থেকে দেখে বড় হয়েছে মেধাবী আনিকা। সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। কৃতি শিক্ষার্থী আনিকার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পাশে দাঁড়ালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম এই কৃতি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হাতে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। মেধাবী শিক্ষার্থী আনিকা জেলার নবীনগর উপজেলার ভোলাচংয়ের কাজীমাবাদ শালকান্দি গ্রামের প্রয়াত মো. ফারুকুল ইসলামের একমাত্র কন্যা সন্তান। বাবাকে হারানোর পর মায়ের ত্যাগ আর লড়াইয়ের জীবনের সংগ্রামে একটু-একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে আনিকা। আনিকা আক্তার যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তো তখন না ফেরার দেশে চলে যান তার বাবা মো. ফারুকুল ইসলাম। এরপর সংসারে আনিকাকে নিয়ে একাই পাঁচটি বছর পাড়ি দেন মা আয়েশা খাতুন। সংসারের লড়াই সংগ্রামের মধ্যেই ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে আনিকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এই কৃতি শিক্ষার্থী। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এইচএসসি পর্যায়ের পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে।

 

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই কৃতি শিক্ষার্থীকে ২০ হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু এই শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাই সেখানে পড়াশোনার খরচ তেমন হবে না। নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিত থাকলে এবং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে এই শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে পারবে। তিনি এই শিক্ষার্থী ও তার মাকে সহায়তা ববাদ দেয়া টাকা পড়াশোনার জন্য খরচের পরামর্শ দেন।

জীবন সংগ্রামী মেয়ে আনিকা বলেন, সহায়তা পেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। সামনে পথটা আরো সংগ্রামের। সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

এইরকম আরও অনেক ঘটনা আমাদের গণমাধ্যমে স্বাক্ষী হয়ে আছে। একজন মানবিক মুল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেধাদীপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম আমাদের মাঝে তাঁর কর্মে অমর হয়ে থাকবেন।

 

লেখক: রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস
কবি ও সাংবাদিক

 

About The Author


Spread the love

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours