মোহাম্মদ ইদ্রিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে॥
বাজারটির নাম বাইশমৌজা। মেঘনা নদীর তীরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটির বয়স প্রায় ২০০ বছর। বাজারটি মেঘনা নদীর পাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার দু’বছর পর সম্মিলিত সিদ্ধান্তে নবীনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরে এই বাজারটি স্থায়ী রূপ লাভ করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার অন্তর্গত বীরগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এই বাজারটি বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের সম্মিলন করে এর নামককরণ করা হয় বাইশমৌজা বাজার। সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এটি। এই সাপ্তাহিক হাটে ব্র্হ্মাণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন। এছাড়া সাধারণ ক্রেতা তো আছেই।
বাজারটিতে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। যেদিক দিয়ে যাওয়া হোক না কেন নৌকা ছাড়া উপায় নেই। মানুষ, পশু ও মালামাল একই নৌকায় আনা নেওয়া করছেন মাঝিরা। সম্প্রতিকালে ব্রীজ-সড়ক যোগাযোগের কাজ চলছে দ্রুত। ব্রিজ ও সড়ক পুরোপুরি চালু হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। দূরদূরান্ত থেকে বড় নৌকা ও ট্রলারে পাইকাররা গরু, মহিষ, ভেড়াসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। বাজারে ঢুকার সময় চোখে পড়ে নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বড়-ছোট নৌকা। ক্রেতাদেরও পশু ও মালামাল নিয়ে ফিরে যেতে হয় নৌকা দিয়ে নদী পথে।
স্থানীয় আমির হোসেন জানান, বাজারটি মঙ্গলবার জমজমাট বেশি থাকে। মূলত গরুর বাজারকে কেন্দ্র করে হয় এই জমজমাট। এইদিনে থাকে ক্রেতা বিক্রেতাদের বিপুল সমাগম। দূর দূরান্ত থেকে আসেন পাইকাররা। বাজারটির বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আছে গরু, মহিষ ও ছাগলের হাট বা বাজার।
ক্রেতাদের ধারণা জেলার অন্যসকল হাট থেকে এখানে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া অনেকটা কম দামে পাওয়া যায়। হাসিল বা রোয়ানা দিতে হয় খুবই কম। বাইশমৌজা বাজারে গরু ও মহিষের হাট বসে পৃথকভাবে। গরুর হাটের দেখা যায় বড় বড় গরু বিক্রয়ের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো আছে। বাজারে অল্প দামের গরুও মজুদ রয়েছে। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুও আছে অনেক। গাভী, ছোট ষাঁড়বাছুর, মাদীবাছুর ও খাসি-ভেড়ার জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক জায়গা। তবে ইদানীং মহিষের দেখা মেলে বেশি।
বাজারের ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত কেনাবেচার পরিমাণ ১৫ থেকে ২০কোটি টাকা। কিন্তু ঈদুল আজহা এলে এর পরিমাণ আনুমানিক দশ বারো গুণ বেড়ে যায়। এরচেয়ে বশি ও হয়। সেই হিসেবে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার পশু বেচাকেনা হয় বলে ধারনা করেন বাজার কমিটি।
+ There are no comments
Add yours