অনলাইন ডেস্ক॥
পোড়াবাড়ির চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস। ইতিহাস বলছে- দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন।
একসময় পোড়াবাড়ি গ্রামটিকে নদীবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সে সময়কালে ধলেশ্বরীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র পোড়াবাড়ি বাজার। তখন পোড়াবাড়ি ঘাটে ভিড়তো বড় বড় সওদাগরি নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার। এ বাজারে যোগ হয় সুস্বাদু চমচম, গড়ে ওঠে মিষ্টির বাজার। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে।
পোড়াবাড়ির মিষ্টি ব্যবসায়ীদের মধ্যে বর্তমানে খোকা ঘোষ ও গোপাল চন্দ্র দাসের নাম উল্লেখযোগ্য। তবে পোড়াবাড়ি নয়, বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজার মিষ্টি শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে। জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও টাঙ্গাইল পোড়াবাড়ি মিষ্টি ঘরে এখনও নির্ভেজাল পোড়াবাড়ির চমচম পাওয়া যায়। এই পাঁচআনি বাজারে প্রায় অর্ধশত মিষ্টির দোকান রয়েছে।
চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা পোড়া ইটের মতো। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা। বড় বড় মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মণ চমচম তৈরি হয়।
চমচমের জনপ্রিয়তা এবং স্বাদ ও মান ভালো হওয়ার একটা কারণ হচ্ছে- চরাঞ্চল থেকে যে সমস্ত গাভীর দুধ আসে, সেগুলো অনেক ভালো। আর জলেরও একটা বিষয় আছে। দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয়। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। মিষ্টি তৈরিতে কোনও ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এসব কারণেই চমচম বিখ্যাত হয়েছে।
আর জেলার পরিচিতি নির্ধারক চমচমের পাশাপাশি এখন রসগোল্লা, আমৃত্তি, জিলাপি, সন্দেশ, দানাদার, দই, খির, রসমালাই, কালোজাম, খাজা, বাতাসা, কদমা, নই টানা ইত্যাদি মিষ্টিও মন ভিজিয়েছে খাদ্য রসিকদের। কিন্তু টাঙ্গাইলের মিষ্টি মানেই পোড়াবাড়ির চমচম।
+ There are no comments
Add yours