১৯৭১ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে এবং মারমুখি আক্রমণ চালায়। পরাজিত হয় পাকিস্তানী বাহিনী। এদিন সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। এস ফোর্সের তৎকালীন অধিনায়ক ছিলেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম। তাঁরই নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্তত ২৫ জন নিহত হয় ও ১৪ জন বন্দী হয়। আখাউড়া উপজেলাকে হানাদারমুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ দক্ষিণ দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একই সঙ্গে মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্টের ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুল শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শহরের চারপাশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থান থাকায় হানাদার বাহিনী বাধ্য হয়ে পিছু হটতে থাকে। এই পিছু হঠতে যাবার কালে ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় নির্মম এক হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কেএম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে পৌর শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে অতিশয় নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।
এছাড়া শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কলেজের হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ইতিহাসের এক মর্মান্তিক অধ্যায় রচিত হয় সেই সময়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে একেবারে বিনা বাধায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে। এর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মূলত দুটি সেক্টরের অধীনে ছিলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে কসবা, গঙ্গাসাগর ও আখাউড়া থেকে পশ্চিমে ভৈরব বাজার রেললাইন পর্যন্ত ছিল ২নং সেক্টরে। এবং পূর্বে সিঙ্গার বিল থেকে উত্তরে হবিগঞ্জ পর্যন্ত ছিল ৩নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার প্রায় ১০ লাখেরও অধিক মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন ও সহযোগিতা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ এখানে মূলত জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে গড়ে তোলা হয়েছে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল রয়েছে। আছে শহরের কাউতলীতে সৌধ হিরন্ময়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবিকৃত অবস্থায় জানান দিতে শহরের জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্ত মঞ্চে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
+ There are no comments
Add yours