বিশেষ প্রতিনিধি॥
দলবেঁধে শতাধিক ভেড়া মেরিন ড্রাইভে গজিয়ে ওঠা ঘাষ খাচ্ছে। পেছনে একজন রাখাল ভেড়াগুলো তদারকি করছেন। দেখে মনে হবে এ যেন ভেড়ার রাজ্য! সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে লাইন ধরে মেরিন ড্রাইভের উত্তর পাশে অবস্থিত খামারে চলে যায় ভেড়াগুলো।
ইছাখালী ইউনিয়নের এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মিরসরাই উপজেলার উপকূলীয় ইছাখালী, মঘাদিয়া, সাহেরখালী ইউনিয়নের চরে এক সময় শতশত ভেড়ার পাল চোখে পড়তো। সেই সময় অর্ধশত লোকের কাছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি ভেড়া ছিল। জেগে ওঠা চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ায় চারণভূমি কমে যাওয়ায় এবং খাদ্য সংকটের কারণে এ সংখ্যা দিন দিন কমছে।
বিগত ১০ বছরে খামারি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে এখনো কিছু খামারি পেশা ধরে রেখেছেন। উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের ভূঁইয়া গ্রামের এক খামারী জানান,‘দাদার আমল থেকে তিনি ভেড়া পালন করে আসছেন। তার বাবাও ভেড়া পালন করেছেন। তখন একরের পর একর খালি জায়গা ছিল, অবাধে বিচরণ করতে পারতো পশুগুলো। বাবার পর প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি ভেড়া পালন করছেন। ভেড়া পালন করে তার অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘৪-৫ বছর আগে তার খামারে ৩৫০টি ভেড়া ছিল। এখন কমে গেছে, আছে ২৪০টি। আগামীতে হয়তো আরও কমে যাবে। তার খামারে ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২১ হাজার টাকা দামের ভেড়া আছে। ভেড়া পালনের জন্য মাসে ৮০০০ টাকা বেতনে দুজন লোক থাকে। প্রায় সময় খামার থেকে ভেড়া বিক্রি করা হয়। তার আয়ের একমাত্র উৎস ভেড়া।
উপজেলার টেকেরহাট এলাকার আরেক খামারি বলেন, ‘ভেড়া পালনই তাদের পেশা। চরের খামারে এখনো শতাধিক ভেড়া আছে। এক সময় তাদের পরিবারে প্রায় ৫০০ ভেড়া ছিল। আলাদা হয়ে যাওয়ায় তার ভাই ফারুক বলি অর্ধেক ভেড়া পালন করছে। ভেড়া ছাড়াও তার খামারে ৯টি মহিষ ও ১৬টি গরু আছে।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে উপজেলায় ৩ হাজার ৯৭৭টি ভেড়া ছিল। ২০২১ সালে ছিল ৩ হাজার ৮০২টি। ২০২২ সালে ৩ হাজার ৭০৬টি। ২০২৩ সালে ভেড়ার সংখ্যা কমে হয়েছে ২ হাজার ৪৭৫টি।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অনেক লোকের আদি পেশা এই ভেড়া পালন। এক খামারি জানান-তিনি ছোটবেলা থেকে ভেড়া পালন করছেন। দাদার আমল থেকে শুরু করে এখনো ভেড়া পালনই তার আয়ের একমাত্র উৎস। এভাবে ভেড়া পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন আবু জাফর, ফারুক বলি, সাব্বিরসহ অনেকে। তবে চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্য সংকটে কমে যাচ্ছে ভেড়ার সংখ্যা।
+ There are no comments
Add yours